আফ্রিকার বিখ্যাত হ্রদসমূহ

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মহাদেশগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আফ্রিকা মহাদেশ। এই মহাদেশটির বুকের উপর দিয়ে বয়ে গেছে অনেক ছোট বড় হ্রদ। এদের মাঝে একগুচ্ছ হ্রদকে একত্রে বলা হয় “আফ্রিকান গ্রেট লেকস”। এ হ্রদ গুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হ্রদ হল লেক ভিক্টোরিয়া, লেক টাঙ্গানইয়াকা, লেক রুকওয়া, লেক তুরকানা, লেক আলবার্ট ও লেক মালাওয়ি। বেশ কিছু দেশ জুড়ে আফ্রিকান গ্রেট লেকস গঠিত। বুরুন্ডি, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, কেনিয়া, তাঞ্জেনিয়া, উগান্ডা ও রুয়ান্ডা জুড়ে এই লেকগুলো অবস্থিত। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই অঞ্চল। গ্রেট লেকের বিশুদ্ধ পানির চারপাশে বাস করে অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী। প্রায় ১৫০০ প্রকার  Cichlid Fish এই লেকগুলোতে বাস করে। এছাড়া, আরও ভিন্ন প্রজাতির মাছও রয়েছে লেকগুলোতে। স্তন্যপায়ী প্রানীদের মধ্যে হাতি, গরিলা এবং জলহস্তি অন্যতম।

ভিক্টোরিয়া হ্রদ আফ্রিকা মহাদেশের বৃহত্তম এবং পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম হ্রদ। ক্ষেত্রফলের দিক দিয়ে এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশুদ্ধ পানির আধার। তবে গভীরতা তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এটি পানির আয়তনের দিক দিয়ে বিশ্বে সপ্তম বৃহত্তম। তাঞ্জেনিয়া, কেনিয়া এবং উগান্ডার মধ্যবর্তী একটি সুউচ্চ মালভূমির উপর এটি অবস্থিত। এ হ্রদে প্রায় ৩০০০ টি ছোট-বড় দ্বীপ রয়েছে, যার অনেকগুলোতেই মানব বসতি রয়েছে। নীল নদ এর দীর্ঘতম উৎস সাদা নীলের উৎপত্তি এ হ্রদ থেকেই। হ্রদটির সর্বাধিক গড় গভীরতা ৪০ মিটার। ১৯ শতকের শুরু থেকই লেক ভিক্টোরিয়া ফেরি সার্ভিস তানজানিয়া , কেনিয়া এবং উগান্ডার মধ্যে একটি অন্যতম যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। এই হ্রদের অন্তর্গত প্রধান বন্দরগুলো হচ্ছে কিসুমো, বুকোবা, জিনজা,  পোর্ট বেল ইত্যাদি। এছাড়া, ভিক্টোরিয়া হ্রদকে আফ্রিকার অন্যতম মৎস্য সম্পদের আধার হিসেবে ধরা হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মানবসৃষ্ট ঘটনায় ভিক্টোরিয়া হ্রদের জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

ভিক্টোরিয়া হ্রদের পর যে হ্রদটির স্থান সেটি হল টাঙ্গানইয়াকা হ্রদ। গভীরতার দিক থেকে বিশ্বে বৈকাল হ্রদের পরেই এর অবস্থান। এছাড়া, আয়তনের দিক থেকেও এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশুদ্ধ পানির আধার। আরেকটি মজার তথ্য হচ্ছে এই হ্রদ সম্পর্কে যে ধারণা করা হয় ভূগর্ভে তীব্র আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠে একপ্রকার ফাটলের সৃষ্টি হয়; আর তারই ফলে এই বিশাল জলাশয়—  টাঙ্গানইয়াকা হ্রদের সৃষ্টি। প্রায় ২৫০ প্রকার Cichlid Fish এই হ্রদে বসবাস করে। টাঙ্গানইয়াকা হ্রদের আশেপাশের দেশসমূহ হচ্ছে তাঞ্জেনিয়া, বুরুন্ডি, জাম্বিয়া ও জায়ার। এছাড়া, এই হ্রদের অন্তর্গত উল্লেখযোগ্য দ্বীপসমূহের মধ্যে কাভালা, মাম্বা-কায়েন্দা, মিলিমা, কুম্বুলা অন্যতম। কুম্বুলা ছাড়া বাকি তিনটি দ্বীপ জায়ারে অবস্থিত। কুম্বুলা দ্বীপটি জাম্বিয়াতে অবস্থিত।

লেক মালাওয়ির অপর নাম নিয়াসা হ্রদ। দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার এই হ্রদটি আফ্রিকা মহাদেশের দ্বিতীয় গভীরতম হ্রদ। হ্রদটির দৈর্ঘ্য ৫৮০ কিলোমিটার। পশ্চিমে মালাওয়ি এবং পূর্বে তাঞ্জেনিয়া ও মোজাম্বিকের মধ্যস্থলে অবস্থিত লেক মালাওয়ি। ১৮৫৯ সালে স্কটিশ মিশনারি ও অভিযাত্রী ডেভিড লিভিংস্টোন প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে হ্রদটি আবিষ্কার করেন। লেক মালাওয়ি ন্যাশনাল পার্ক হ্রদের দক্ষিণতম অংশে অবস্থিত। হ্রদের তীরে প্রচুর মাছ শিকার করা হয়। এই হ্রদটি সম্পর্কে মজার তথ্য হচ্ছে এই হ্রদের পানির বিভিন্ন স্তর একেকটার সাথে অন্যটা মিশে না। এই ধরণের হ্রদকে ইংরেজিতে বলা হয় Meromictic Lake

পৃথিবীর বৃহত্তম অ্যালকালাইন হ্রদটিও এই আফ্রিকাতে অবস্থিত। হ্রদটির নাম লেক তুরকানা। লেক তুরকানার প্রাচীন নাম হচ্ছে লেক রুডলফ। পূর্ব কেনিয়াতে এই হ্রদটির অবস্থান। তবে এই হ্রদের আশেপাশের জলবায়ু খুব গরম ও শুষ্ক থাকে। নৃতত্ববিদরা লেক তুরকানা এলাকাটিকে “Cradle of Humankind” হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন কেননা এখানে মানুষের বিভিন্ন প্রাচীন সময়কালের ফসিল পাওয়া যাওয়ার কারণে। লেক তুরকানাতে শতশত প্রজাতির পাখি বিচরন করে। এছাড়া, অতিথি পাখিরাদের আগমন ঘটে এই এলাকায়। অসংখ্য কুমিরও দেখা যায় এখানে।

উগান্ডা এবং কঙ্গো এই দুইটি দেশের মধ্যে অবস্থিত আরেকটি হ্রদ হচ্ছে আলবার্ট হ্রদ। ১৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩০ কিলোমিটার প্রস্থ এই হ্রদটির সর্বোচ্চ গভীরতা ৫১ মিটার। এই হ্রদটি “মবুতু সেসো সিকো” নামেও পরিচিত। হ্রদটির  উৎপত্তি নীল নদ থেকে। এই হ্রদটি কয়েকটি উপদ্বীপ নিয়ে গঠিত।

      

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন