নাসার স্পেসক্রাফট বিধ্বস্ত

নাসার স্পেসক্রাফট ‘মেসেঞ্জার’ সম্প্রতি বুধ গ্রহের পৃষ্ঠদেশে আছড়ে পড়েছে। গত ৪ বছর ধরে এই গ্রহটিকে প্রদক্ষিণ করছিল মেসেঞ্জার। ১১ বছর আগে পৃথিবী থেকে মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে অনেকগুলো তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়ে এই স্পেসক্রাফট।

মনুষ্যবিহীন এই স্পেসক্রাফট মাত্র ৩ মিটার লম্বা ছিল। শেষ পর্যন্ত জ্বালানী ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে এটি বুধের গায়ে আছড়ে পড়ে এবং ১৬ মিটার ব্যাসের একটি খাদ তৈরি করে।

মেসেঞ্জার (MESSENGER) এর নামকরণ করা হয়েছে Mercury Surface, Space Environment, Geochemistry আর Ranging। মেসেঞ্জার ছিল বুধের উদ্দেশ্যে পাঠানো ২য় মহাকাশ অভিযান। ২০০৪ সালের আগস্ট ৩ তারিখে এটি পাঠানো হয়।

বোয়িং ডেল্টা-২ রকেটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কেপ ক্যানাভেরাল মহাশূন্য স্টেশন থেকে এটি প্রেরণ করা হয়েছিল। একে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে তা সুনির্দিষ্ট পথে চলার মাধ্যমে বুধের চারদিকে নিজস্ব একটি কক্ষপথ তৈরীতে সমর্থ হয়।

২০০৫ সালের আগস্ট মাসে এটি পৃথিবীর কাছ দিয়ে উড়ে যায় এবং ২০০৭ সালের অক্টোবর ও জুন মাসে শুক্র গ্রহের কাছ দিয়ে উড়ে যায়। এই যানটি বুধের নিকট দিয়ে তিন তিনবার উড়ে যাবে বলে ঠিক করা হয়েছিল। এই উড়ে যাওয়ার সময়গুলো ছিল জানুয়ারি ২০০৮, অক্টোবর ২০০৮ এবং সেপ্টেম্বর ২০০৯। এরপর তা ২০১১ সালের মার্চ মাসে বুধ গ্রহের চারপাশে কক্ষপথে প্রবেশ করে।

মেসেঞ্জারকে পাঠানো হয়েছিল মূলত বুধের ছয়টি মৌলিক বিষয়ে অনুসন্ধান করার জন্য। এগুলো হচ্ছে: বুধের উচ্চ ঘনত্ব, ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস, চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রকৃতি, কেন্দ্রের গঠন, বুধের মেরু অঞ্চলসমূহে আসলেই বরফ রয়েছে কিনা এবং এর পাতলা বায়ুমণ্ডল কোথা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে।

এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে এই অনুসন্ধানী যানটিতে উচ্চ শক্তিশালী ইমেজিং যন্ত্রপাতি সন্নিবেশিত করা হয়েছিল যাতে বুধের আরও কাছ থেকে অপেক্ষাকৃত অধিক রেজল্যুশনবিশিষ্ট ছবি তোলা যায়।

মেসেঞ্জারে ছিল যুতসই বর্ণালীবীক্ষণ যন্ত্র যার সাহায্যে বুধের ভূত্বকে মৌলসমূহের প্রাচুর্য নির্ণয় করা সম্ভব। এছাড়া ছিল ম্যাগনেটোমিটার এবং আয়নিত কণিকাসমূহের গতিবেগ নির্ণয়ের যন্ত্রাবলী।

মেসেঞ্জার যখন বুধকে কেন্দ্র করে তার কক্ষপথ বরাবর আবর্তন করে তখন এর গতিবেগের সূক্ষতম পরিবর্তন পরিমাপের জন্য এই গতিমাপক যন্ত্রগুলো দেয়া হয়েছিল। এই পরিবর্তন পরিমাপের মাধ্যমে বুধের অভ্যন্তরীন গঠন সম্বন্ধে বিস্তারিত অনেক কিছুই জানতে পেরেছেন গবেষকরা।

মেসেঞ্জার মোট ৪ হাজার ১০০ বার বুধকে প্রদক্ষিণ করে। এ সময় মেসেঞ্জারের পাঠানো তথ্য থেকে জানা যায় এই গ্রহে অল্প পরিমাণ জমাট বাঁধা বরফ রয়েছে। আরও রয়েছে পটাশিয়াম, সালফারসহ বেশ কিছু উদ্বায়ী পদার্থ।

এ কারণেই বুধ গ্রহের পৃষ্ঠের গড় তাপমাত্রা ১৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের বেলা এই তাপমাত্রা ৪২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে। উল্লেখ্য বুধ সৌরজগতের প্রথম এবং সূর্যের সবচেয়ে নিকটতম গ্রহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন