ব্যাটসম্যানের খেলার সাথী

ক্রিকেটারদের (বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের) অনুশীলনের জন্যে ইনডোরে এক রকম বিশেষ মেশিন ব্যবহার করা হয়। যে মেশিনের মাধ্যমে যেকোনো গতির এবং যেকোনো লেন্থের ধরনের বল নিক্ষেপ করা হয়। প্রায় ৬ ফুট লম্বা এই মেশিনগুলো বোলিং মেশিন নামে পরিচিত।

সাধারণত প্র্যাকটিসের সময় যারা বোলিং করে, বেশিরভাগক্ষেত্রে নেট বোলারদের বোলিং খুব বেশি ভালো মানের থাকে না। এজন্যে এই বোলিং মেশিনের আবিষ্কার। সর্বোচ্চ ১৬৭ কিলোমিটার/ঘন্টা বেগের বল নিক্ষেপ করতে পারে এক একটি মেশিন।

সাধারণত তিন ধরনের বোলিং মেশিন দেখতে পাওয়া যায়। একটি মেশিন শুধুমাত্র বাতাসের চাপকে কাজে লাগিয়ে বল নিক্ষেপের কাজ সম্পন্ন করে। দ্বিতীয়টি শক্ত স্প্রিংয়ের মাধ্যমে কাজ করে। আর সবচেয়ে অত্যাধুনিক যে মেশিনটি রয়েছে, তা একটি বা দুটি ঘূর্ণায়মান চাকার মাধ্যমে বলের গতি নিয়ন্ত্রন করে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে। তৃতীয় ধরনের মেশিনটি বর্তমানে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত।

Paceman cricket bowling machine
ছবি : সংগৃহীত

দেখে নেয়া যাক কি কি যন্ত্র নিয়ে মেশিনটি তৈরিঃ

১. একটি বা দুটি বড় চাকা (বল নিক্ষেপ করার কাজে ব্যবহৃত হয়)

২. কয়েকটি ধাতুর সংকরে গঠিত ছোটো ছোটো চাকা

৩. মোটর

৪. বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রিত প্যানেল

৫. লম্বা, সরু বাক্সের মত একটি অংশ

৬. লম্বা স্ট্যান্ড

পুরো প্রক্রিয়াটি খুবই সহজভাবে সম্পন্ন হয়। বড় দুটি চাকার মাধ্যমে মূলত বলের গতি নিয়ন্ত্রন করা হয় এবং প্রতিটি চাকা নিজস্ব বৈদ্যুতিক মোটর দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। প্রতিটি মোটর অটোমোটিভ ব্যাটারি দ্বারা চলে। কন্ট্রোলারের সাহায্যে প্রতিটি চাকার ঘূর্ণন ঠিক করা হয়। যেমন, বাম এবং ডান চাকার ঘূর্নন গতি যদি মিনিটে ১৫০০ হয়, তাহলে বলের গতি হবে ৮৪ কি.মি/ঘন্টা। ঘূর্নন যত বাড়বে, বলের গতিও তত বাড়তে থাকবে।

আর, সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয় হলো বলের গতিপথ। বলটি ইনসুইং হবে নাকি আউট সুইং হবে অথবা স্ট্রেইট হবে, তা কিভাবে ঠিক করা হয়??

এটিও খুব সহজ।

বাম চাকার ঘূর্ণন যদি ডান চাকার চেয়ে কম হয়, তাহলে বলটি আউটসুইং করবে। আর বাম চাকার ঘূর্ণন যদি বেশি হয়, তাহলে তা ইনসুইং হবে। আর দুই চাকার ঘূর্ণন সমান হলে বলটি স্ট্রেইট বল হবে।

প্রত্যেকটি বলের জন্যে আলাদা আলাদা গতি এবং গতিপথ ঠিক করে দেয়া যায়। আবার একই স্পিড দিয়েও একটানা বল করানো যায়। এক্ষেত্রে যে ব্যাপারটি মাথায় রাখা হয় তা হলো, আসন্ন কোনো দেশের সাথে খেলা আছে। অর্থাৎ, যে দেশের সাথে খেলা হবে সে দেশের বোলারদের সাধারন বৈশিষ্ট্যগুলো মূলত পর্যবেক্ষন করে মেশিনের কৌশল ঠিক করা হয়। যেমন, খেলা যদি অস্ট্রেলিয়া বা দক্ষিন আফ্রিকার সাথে হয়, তাহলে প্র্যাকটিসের সময় মেশিনে ১৫০+ গতি এবং সুইং সহ ডিফল্ট (Default) করে দেয়া হয়।  আর প্রতিপক্ষ হিসেবে যদি এশিয়ান কোনো দেশ থাকে, তাহলে বলের গড় গতি ১৪০ এর নিচে রেখে প্র্যাকটিস করা হয়। কারণ উপমহাদেশীয় বোলারদের মধ্যে খুব কম বোলারই ১৪০ কি.মি/ঘন্টার বেশি বেগে বল করেন।

ক্রিকেট ছাড়াও বেসবল এবং টেনিসে প্র্যাকটিসের জন্যে এই মেশিনের ব্যবহার অনেক বেশি। আর এ মেশিনের সাথে নতুন সংযোজন হচ্ছে “ভিডিও বোলিং সিমুলেটর”, যার মাধ্যমে সরাসরি বোলারদের অ্যাকশনগুলো বুঝে প্র্যাকটিস করা যায়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন