প্রকৃতির সৌন্দর্য জলপ্রপাতঃ ইগুয়াসু জলপ্রপাত

প্রাচীন উপকথা মতে, একবার এক বিশাল ক্ষমতাধর দেবতা নাইপি নামের একজন সুন্দরী রমণীর প্রেমে পড়েন। দেবতা ঠিক করেন, যে করেই হোক তিনি এই মেয়েকে বিয়ে করবেন। কিন্তু নাইপি নামের মেয়েটি বেঁকে বসেন। কেননা সে ভালোবাসতো আরেকজনকে। তিনি এই দেবতার দেয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। জীবন বাঁচাতে নাইপি তার প্রেমিককে সাথে নিয়ে ইগুয়াসু নদীতে নৌকা ভাসান। দেবতা ক্রোধান্বিত হয়ে ইগুয়াসু নদীকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলেন। নাইপি সেই ঢাল বেয়ে নিচে পড়ে যেতে থাকেন। সেখান থেকেই ইগুয়াসু জলপ্রপাতের সৃষ্টি।

ইগুয়াসু শব্দটি এসেছে গুয়ারানি ভাষার একটি শব্দ থেকে যার অর্থ ‘পানি’ এবং ‘সবচেয়ে বড়’। প্রথম ইউরোপীয় হিসেবে স্পেনের নাগরিক কনকুয়েস্টাডর আলভার নূনেজ দক্ষিণ আমেরিকার এই বৃহৎ জলপ্রপাতটির অস্তিত্ব লিপিবদ্ধ করেন।

প্রশস্ততার দিক দিয়ে ইগুয়াসুকে একটা বিশালদেহী দৈত্য বলা যায়। ইগুয়াসু জলপ্রপাতের শতকরা ৮০ ভাগ পড়েছে আর্জেন্টিনার মিশনিস প্রদেশে এবং বাকি ২০ ভাগ ব্রাজিলের পারানা প্রদেশে। পারানা নদী যেখানে ইগুয়াসু নদীতে মিলিত হয়েছে তার ঠিক ২৪ কিলোমিটার পূর্বে ইগুয়াসু জলপ্রপাতের শুরু।

ইগুয়াসু জলপ্রপাতটি প্রায় ২.৪ কিলোমিটার জুড়ে প্রশস্ত যা প্রায় ২৭৫ টি ছোট বড় জলপ্রপাতের সমন্বয়ে গঠিত। এই মোট জলপ্রপাতের প্রকৃত সংখ্যা মৌসুমের উপর নির্ভর করে। বর্ষা মৌসুমে এর প্রশস্ততা ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

এই জলপ্রপাত গুলোর মধ্যে সবচেয়ে উঁচু এবং বড় জলপ্রপাতটিকে ‘ডেভিলস থ্রট’ নামে ডাকা হয়। ৮০ মিটার উঁচু থেকে পতিত এ জলপ্রপাত এক ধরণের মেঘের সৃষ্টি করে, যা সত্যিই রহস্যময়।

Iguazu-Falls-Argentina

উত্তর আমেরিকার নায়াগ্রা জলপ্রপাত থেকে ইগুয়াসু প্রায় দুই গুন উঁচু। এর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জিম্বাবুয়ে এবং জাম্বিয়ার সীমান্তে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাত, যার উচ্চতা ১০৮ মিটার। মার্কিন ফার্স্ট লেডি ইলেনর রুজভেল্ট ইগুয়াসু দেখে এতোই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি উত্তর আমেরিকার জলপ্রপাত নায়াগ্রাকে বলেছিলেন, “বেচারা নায়াগ্রা”।

বছরের সময়ের উপর নির্ভর করে ইগুয়াসু জলপ্রপাত থেকে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ১৫০০ কিউবিক পানি ভূপৃষ্ঠে পতিত হয় – যা ৫ টি অলিম্পিক সুইমিং পুলকে ১ সেকেন্ডে পানিপূর্ণ করতে সক্ষম।

ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার সীমান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ইগুয়াসু জলপ্রপাত ১৯৮৪ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষিত হয়। ২০১১ সালে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের একটি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে এটি এর বিশেষত্ব প্রমান করে।

ইগুয়াসুর চারপাশে ঘন জঙ্গল এবং এটি দক্ষিণ আমেরিকার ঘনবর্ষণ হওয়া বনাঞ্চলের একটি। এখনে প্রায় ২০০০ প্রজাতির গাছ, ৪০০ প্রজাতির পাখি এবং ২০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী বাস করে।

ইগুয়াসু জলপ্রপাতে আর্জেন্টিনা এবং ব্রাজিল দু দিক থেকেই যাওয়া যায়। আর্জেন্টিনার বুয়েন্স এয়ারস থেকে ইগুয়াসু তে পৌছাতে লাগে ৯০ মিনিট। রিও ডি জেনিরিও থেকে প্লেনে করে ইগুয়াসু পৌছাতে সময় লাগে প্রায় ২ ঘণ্টা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
অনুগ্রহ করে এখানে আপনার নাম লিখুন